নাম করণের ঐতিহ্যঃ
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার নাম করণে রয়েছে অভিনবত্ব- শোনা যায় পারস্য এলাকা থেকে আগত কতিপয় মুসলিম সাধক অত্র এলাকার প্লাবিত অঞ্চলে টং বেঁধে বসবাস করতে থাকেন এবং কালক্রমে ঐ টং থেকেই নাম হয় টুঙ্গিপাড়া। বর্তমানে কালের বিবর্তনে বড়-বড় দালান-কোঠার মাঝে হারিয়ে যেতে বসেছে এ ঐতিহ্য। তবে উপজেলার বিলাঞ্চল ও নীচু এলাকা সাধারণ মানুষ এখনো এ ধরণের টং বেঁধে ঘর বানিয়ে বসবাস করতে দেখা যায়।
জীবন-জীবিকার ঐতিহ্যঃ
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মানুষ স্বভাব চরিত্রে অতি সহজ, সরল, হাস্যজ্বোল, প্রাণচঞ্চল সাদা-মাটা জীবন যাপন করেন থাকেন। তবে আতিথিয়তার এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে গৌরবদৃপ্ত সুনাম। অতি সাধারণ জীবন-যাপনে অভ্যস্ত এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষি কাজ, মৎস্য আহরণ, পশু-পালন ও সাধারণ ব্যবসাই এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান উপ-জীবিকা।
খাদ্যাভাস ও রুচিঃ
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মানুষের ক্ষেত্রে মাছে ভাতে বাঙালী কথাটি সম্পূর্ণ ভাবে প্রযোজ্য। টুঙ্গিপাড়া উপজেলার অভ্যন্তরে রয়েছে অসংখ্য ছোট-ছোট খাল, বিল, পুকুর, নদী-নালা, বাও্ড়। এ অঞ্চলের খাল-বিল-বাওড়ে প্রচুর পরিমানে মাছ পাওয়া যায়। তাই দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় দেশীয় প্রজাতির মাছ থাকবেই, মাছ ছাড়া খাবার মেনুই অসম্পন্ন। পোশাক-পরিচ্ছদে এ অঞ্চলের মানুষ সাধারণ পাঞ্জাবী-পাজামা ও শাড়ীই বেশি পছন্দনীয়। তবে বতর্মানে যুবক-যুবতীদের পোশাকে কিছুটা আধুনিকতা ও বৈচিত্রময়তা লক্ষকরা যায়।
ভাষা ও সংষ্কৃতি ও বিনোদনঃ
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ভূ-প্রকৃতি ও ভৌগলিক অবস্থান উপজেলার মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতির উপর ব্যপক প্রভাব ফেলেছে। উপজেলার দক্ষিন-পুর্বাঞ্চল জুড়ে রয়েছে বাগেরহাট, নাজিরপুর, পিরোজপুর ও বরিশাল অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রা। যা এ উপজেলার মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করছে। এ অঞ্চলের মানুষের ভাষার মধ্যে ফরিদপুর ও ঢাকা অঞ্চলের ভাষা কিছুটা লক্ষ করা যায়, তাছাড়া আঞ্চলিক ভাষার প্রভাবতো রয়েছেই। ফলে উপজেলার ভাষা হিসেবে টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় মিশ্র ভাষা চলমান বলা যেতে পারে। তবে এ উপজেলার অধিকাংশ জনগণই বইয়ের ভাষায় কথা বলে থাকে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার অধিকাংশ লোকই সংস্কৃতি মনা। উপজেলায় প্রতি বৎসর বৈশাখী মেলা, কৃষি মেলা, বৃক্ষ মেলা, নবান্ন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া বিবাহ উৎসব, নবান্ন উৎসব, শীতকালীন পিঠা উৎসব, ঈদ উৎসব, বিভিন্ন পূজা উদযাপনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। উৎসব পালনের সময় লাঠিখেলা, পল্লীগীতি, লালনগীতি, মঞ্চ নাটক, যাত্রা পালা, ভক্তিমূলক গান ইত্যাদি স্থানীয় লোকজনসহ বিভিন্ন শিল্পগোষ্টির মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। এছাড়া উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি এ উপজেলার সংস্কৃতি চর্চায় যোগ করেছে ভিন্ন একটি মাত্রা।