Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

মুক্তিযুদ্ধে টুংগীপাড়া

১৯৭০ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ছাড়তে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী টালবাহানা শুরু করলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষন দেন। ভাষা শৈলীর সৌন্দর্যে ভরপুর এ ভাষনের মধ্য দিয়ে তিনি প্রচ্ছন্ন ভাবে স্বাধীনতার ঘোষনা করেন যা চুড়ান্ত রুপ নেয় ২৫ মার্চ রাতে ই,পি, আর এর ওয়্যারলেস বার্তার মাধ্যমে ।

টুংগীপাড়া বঙ্গবন্ধুর নিজের জন্ম স্থান। তার স্বাধীনতার ডাকে তাই এ অঞ্চলের আবাল বৃদ্ধ বনিতা সাড়া দিয়ে যুদ্ধে ঝাপিঁয়ে পড়ে।

বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ আবু নাসের এ সময়ে গ্রামে ফিরে এসে যুবকদের সংগঠিত ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারনের চেষ্টা চালান। তিনি পান্না বিশ্বাস কে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান। এর কিছু দিনের মাঝে শেখ কামালও এখানে এসে কেড়াইলকোপা গ্রামের সাবেক ই পি আর সদস্য কাজী মোস্তফা ও সেনা সদস্য জনাব রাসেক কে নিয়ে যুবকদের সংগঠিত করেন। পরবর্তিতে সবাই প্রশিক্ষনের জন্য ভারত চলে যান। এ সময় গিমাডাঙ্গা গ্রামের মেজর আব্দুর রহমানও ঘোনাপাড়ায় যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য সংগঠিত করেন।

এদিকে ১৭ মার্চে পাটগাতি বাজারে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। যারা এ সময় পতাকা উত্তোলন করেন তাঁরা হলেন সৈয়দ নুরুল হক মানিক মিয়া, শেখ আকরাম হোসেন, শেখ মোতালেব, কর্নেল আব্দুর রহমান, মজিবর রহমান মোল্লা, সোলায়মান খলিফা, সাখাওয়াৎ শিকদার, শেখ শহিদুল ইসলাম, আকবর আলী শিকদার, আবুল বাশার, রাঙ্গা, শেখ আলোমগীর হোসেন দিলু, শেখ লুৎফর রহমান, শেখ মোঃ জাহাঙ্গির হোসেন, এস এম এনামুল হক, শেখ লিয়াকত হোসেন, আঃ কুদ্দুস ফকির, মোমেন শরিফ, সোলায়মান শিকদার, সালু খাঁ প্রমুখ।

ধানমন্ডি ৩২ থেকে শেখ জামাল পালিয়ে গেলে তাকে খোঁজ করতে হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুর বাড়ীতে চলে আসে। তারিখ ছিল ১৯ মে ১৯৭১। এ সময় তারা বঙ্গবন্ধুর বাড়ী জ্বালিয়ে দেয়। ঐ দিন হানাদার বাহিনী নির্মম ভাবে এই গ্রামের ছয় জনকে গুলি করে হত্যা করে। এরা হলেন শেখ মিন্টু, কাজী তোরাব আলী, শেখ আরশাদ আলী, মোঃ লিয়াকত ওরফে লিকু, ধলা মিয়া কবিরাজ ও সরদার। শেখ বাড়ীর শেখ বোরহান উদ্দিন কে পাক বাহিনী ধরে ফেলে। তার ফুফু পাক বাহিনীর কমান্ডার কে কাজের ছেলে বলে ছাড়িয়ে রাখে। পাক বাহিনী শেখ আকরাম হোসেন, কাজী সাহাউল আলম ও শেখ ইমাম হোসেন কে ধাওয়া করে। শেখ আকরাম দৌড়ে পালিয়ে যান। কাজী আলম ও শেখ ইমাম কাজী নওশের আলী সাহেবের গোলা ঘরে লুকিয়ে থেকে প্রান বাচাঁন। এ পরিস্থিতে বঙ্গবন্ধুর মা ও বাবা কে মৌলভী আব্দুল বারী বিশ্বাসের বাড়ীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঐ বাড়ী নিরাপদ না হওয়ায় কিছুদিন পর পাশে ঝিলু বিশ্বাসের বাড়ীতে আশ্রয় নেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ যখন তুঙ্গে হেমায়েত বাহিনীর দুই সদস্য আলম ও ফারুখ তাদের কে শিবচর ইলিয়াস চৌধুরীর বাড়ীতে রেখে আসে।

ভারতের বাগুন্ডিয়া ক্যাম্প থেকে মূলত টুংগীপাড়ার অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষন ও অস্ত্র নিয়েছিলেন। টুংগীপাড়ায় বড় ধরনের কোন যুদ্ধ হয়নি। কারন সে সময় এ অঞ্চল ছিল দূর্গম। এ কারনে হানাদার বাহিনী নদী দিয়ে গানবোট নিয়ে টহল দিত। তাই এ অঞ্চলের যোদ্ধারা দেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেছে।

আলী আকবর শিকদার বাগুন্ডিয়া ক্যাম্প থেকে অস্ত্র নিয়ে ক্যাপ্টেন আবজালের সাথে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। সাতক্ষীরার ওয়াপদা বিল্ডিং এ পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ করেন। এরপর আলীপুর মাহমুদপুর ই পি আর ক্যাম্প আক্রমন করেন। এখানে পাক সেনারা আত্নসমর্পণ করে। পরে খুলনা বেতার কেন্দ্রে হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেন। তিনি ৯ নং সেক্টরে মেজর আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন।

পাটগাতীর সিরাজুল হক খলিফা ১৯৭১ সালে ই পি আর এ ছিলেন। তিনি এ সময় খুলনা ৫ নং উইং এ যুক্ত ছিলেন। মার্চের উত্তাল দিনে তাকে সহ অনেক বাঙ্গালী ই পি আর সদস্যকে যশোরের ঝুমঝুম ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৬ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তান বাহিনী ক্যাম্প ঘেরাও করলে তিনি সহ অন্যান্যরা বিদ্রোহ করে যুদ্ধ শুরু করেন। এরপর তিনি ভারতে প্রবেশ করে বিহার রাজ্যে চাকুলিয়া ক্যাম্পে প্রশিক্ষন শিবিরে যুক্ত হন। ওখান থেকে বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসের ও পান্না বিশ্বাস সহ তাকে ভারতীয় ক্যাপ্টেন শেপা, বাগুন্ডিয়া ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। এখান থেকে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে চিতলমারী আসেন। এ সময় তাদের নেতৃত্ব দেন চিতলনারীর বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা শামচু মল্লিক। শামচু মল্লিকের নেতৃত্বে বাগেরহাটের মাধবকাঠি মাদ্রাসায় হানাদার বাহিনীর সাথে তীব্র যুদ্ধ হয়। রাত ১২ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত একটানা এ যুদ্ধ চলে। দুপুরের দিকে লঞ্চ ডুবিয়ে দিলে হানাদার বাহিনী গানবোট নিয়ে পালিয়ে যায়। আরো অনেক জায়গায় এ মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা হামলা চালিয়েছেন। যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর মা বাবার খবর তার ছোট ভাই শেখ নাছেরর কাছে পৌছে দিতেন।

বিশ্বাস সিরাজুল হক পান্না (পান্না বিশ্বাস) গোপালগঞ্জের তৎকালিন কায়েদে আজম কলেজে বর্তমান সরকারী বঙ্গবন্ধু কলেজে ছাত্রলীগ করতেন। ঐ সময়ে সরকারী ছাত্র সংগঠন এন এস এফ এর প্রভাব ছিল প্রচন্ড। পান্না বিশ্বাস, লালু, ইসমত কাদির গামা সহ অন্যান্য যারা গোপালগঞ্জে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন তাদের সাথে এন এস এফ এর অনেকবার সংঘর্ষ হয়। ৭০ এর নির্বাচনে সাবেক মন্ত্রী ওহেদুজ্জামান পরাজিত হলে এন এস এফ আরো ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ৭ মার্চের ভাষনের পর থেকে পান্না বিশ্বাস সহ অন্যান্য ছাত্রলীগের নেতারা গোপনে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। এ সময় ঢাকা থেকে শেখ আবু নাসের টুংগীপাড়ায় এসে উপস্থিত হন। কিছুদিন থাকার পর তিনি পান্না বিশ্বাস কে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান। ভারতের টাকি ক্যাম্পে প্রশিক্ষন শেষে শেখ আবু নাসের ও তাকে ভারতীয় সেনা বাহিনীর ক্যাপ্টেন শেপা, বাগুন্ডিয়া ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে শামচু মল্লিকের নেতৃত্বে তিনি চিতলমারী দিয়ে বাগেরহাটে প্রবেশ করেন। বাগেরহাটের মাধবকাঠি মাদ্রাসায় পাক সেনাদের সাথে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। রাতে শুরু হওয়া যুদ্ধ চলে দুপুর পর্যন্ত। এ সময় আশপাশের লোকজন তাদেরকে শুকনা খাবার দিয়ে যায়। যুদ্ধে পাক বাহিনী পরাজিত হয় ও পালিয়ে যায়। জলাভূমিতে সারারাত যুদ্ধ করার কারনে ও জোঁকের কাঁমড়ে সারা শরীরে ক্ষতের সৃষ্টি হলে তিনি সহযোদ্ধা আউব আলী বিশ্বাস, সাবেদ মোল্লাসহ আরও চার পাঁচ জনকে সাথে নিয়ে টুংগীপাড়া চলে আসেন। টুংগীপাড়ায় এসে তাঁর সঙ্গে থাকা অস্ত্র ও পিতার সরকারি বন্দুক দিয়ে গ্রামের যুবকদের সংগঠিত করেন। তার আগমনের খবর টুংগীপাড়ায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় রাজাকাররা গা ঢাকা দেয়। এ সময় মধুমতি নদী দিয়ে গানবোট নিয়ে পাকিস্তানী বাহিনী চলাচল করত। তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে গানবোটে হামলা করলে নদীতে গানবোট চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ে বেশ কিছু দিন তিনি গোপালগঞ্জে অবস্থান করেন। ফলে সেখানে রাজাকারদের লুটতরাজ কমে যায়। তিনি বেশ কিছু গেরিলা হামলায় অংশ নেন। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসায় শরীর ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকলে তিনি ভারতে আবার চলে যান এবং সেখানে চিকিৎসা নিয়ে প্রথমে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সংবাদ সরবরাহের কাজ শুরু করেন এবং পরবর্তীতে প্রবাসী সরকারের সাথে যুক্ত হন।

শেখ মোঃ লিয়াকত হোসেন ১৯৬৯ সালে আনসারের ট্রেনিং নেন। ১৯৭০সালে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছেড়া নিয়ে পাটগাতি বাজারে গন্ডগোল হয়। এ সময় গওহোরডাঙ্গার আব্দুল আলী খুন হয়ে যান। শেখ মোঃ লেয়াকত হোসেন, শেখ মোঃ লুতফর রহমান, শেখ মোঃ বেলায়েত হোসেন সহ আরো অনেকজনকে আসামী করে মামলা হয়। পরে মার্শল’ল তুলে নিলে তারা জামিন পান। শেখ লিয়াকত এরপর মেজর শামচু মল্লিকের ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যোগদেন। ধোপাখালি মাদ্রাসায় পাকবাহিনী ও রাজাকারদের সাথে যুদ্ধ করেন। এ যুদ্ধে ৭ জন পাকিস্তানি ও ১৩ জন রাজাকার মারা যায়। এরপর তিনি চরকুলিয়া যুদ্ধে অংশ নেন। এরপর তিনি শেখ মোশাররফ হোসেন ও শেখ লুতফর রহমানের সাথে ভারতে প্রশিক্ষনের জন্য যান। মেজর জলিলের নির্দেশে তিনি আবার বাংলাদেশে প্রবেশ করেন এবং যশোরের কালিগঞ্জে মোবারকগঞ্জ চিনি কলের যুদ্ধে অংশ নেন। এ সময়ে তার পায়ে গুলি লাগে। তিনি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে ১০ মার্চ বর্নি ইউনিয়নের সাহেব আলী মোল্লা, গাজী মোঃ সালাহ উদ্দিন, মোক্তার হোসেন মোল্লা, মরহুম হারুনুর রশীদ গোপালগঞ্জ থেকে ডেমি রাইফেল সংগ্রহ করেন। এরপর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে গেরিলা হামলা চালান। শেখ আহমেদ হোসেন মীর্জা ভারত থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে ৯ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলের নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন বর্নি ইউনিয়নের মোঃ ফায়েকুজ্জামান। তারা মেজর জলিলের নেতৃত্বে যশোর শহর অবরোধ করেন। সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম (ফকরুল) ভারতের বিহার রাজ্যের বীরভূম জেলার বাগুন্ডিয়া ক্যাম্পে প্রশিক্ষন নেন। তার কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন সুলতান। তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী ছিলেন। জনাব সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে ক্যাপ্টেন বেগের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন। এ সময় ক্যাপ্টেন বেগের হাতে গুলি লাগে। তিনি এ জেলার দেবহাটা থানার কুলিয়ায় যুদ্ধ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন গিমাডাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল রাজ্জাক। যুদ্ধের সময় ১৬ টি অস্ত্র হারিয়ে যায় যেগুলো পরে মেজর নারায়ন চক্রবর্তীর সহায়তায় নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম গোপালগঞ্জের রামদিয়ায় ক্যাম্প করেন। ৫ ডিসেম্বর তারা গোপালগঞ্জ শহরের পুরাতন পুলিশ লাইনে বাংলাদেশের পতাকা উড়ান। শ্রীরামকান্দীর শেখ বেলায়াত হোসেন হেমায়েত বাহিনীর সাথে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে এক সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হোন। কোটালীপাড়ার বালিয়াডাঙ্গায় তার কবর আছে। টুংগীপাড়ার কাজী বদরুল আলম ৮ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এক সম্মুখ যুদ্ধে তার চোখে গুলি লাগে। তিনি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা।

১৯৭১ সালের আষাঢ় মাসে ডুমুরিয়া বাজারে পাক বাহিনী ও তার দোসররা নির্বিচারে গুলি চালায় ও ঘর-বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা ভারানি খালের মুখে এলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর গেরিলা হামলা চালায়। 

শেখ আহমেদ হোসেন মীর্জা ভারত থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে ৯ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলের নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন বর্নি ইউনিয়নের মোঃ ফায়েকুজ্জামান। তারা মেজর জলিলের নেতৃত্বে যশোর শহর অবরোধ করেন।

সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম (ফকরুল) ভারতের বিহার রাজ্যের বীরভূম জেলার বাগুন্ডিয়া ক্যাম্পে প্রশিক্ষন নেন। তার কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন সুলতান। তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী ছিলেন। জনাব সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে ক্যাপ্টেন বেগের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন। এ সময় ক্যাপ্টেন বেগের হাতে গুলি লাগে। তিনি এ জেলার দেবহাটা থানার কুলিয়ায় যুদ্ধ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন গিমাডাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল রাজ্জাক। যুদ্ধের সময় ১৬ টি অস্ত্র হারিয়ে যায় যেগুলো পরে মেজর নারায়ন চক্রবর্তীর সহায়তায় নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম গোপালগঞ্জের রামদিয়ায় ক্যাম্প করেন। ৫ ডিসেম্বর তারা গোপালগঞ্জ শহরের পুরাতন পুলিশ লাইনে বাংলাদেশের পতাকা উড়ান।

শ্রীরামকান্দীর শেখ বেলায়াত হোসেন হেমায়েত বাহিনীর সাথে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে এক সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হোন। কোটালীপাড়ার বালিয়াডাঙ্গায় তার কবর আছে।

টুংগীপাড়ার কাজী বদরুল আলম ৮ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এক সম্মুখ যুদ্ধে তার চোখে গুলি লাগে। তিনি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা।

১৯৭১ সালের আষাঢ় মাসে ডুমুরিয়া বাজারে পাক বাহিনী ও তার দোসররা নির্বিচারে গুলি চালায় ও ঘর-বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা ভারানি খালের মুখে এলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর গেরিলা হামলা চালায়। এ সময় অনেকে হতাহত হন। এদের মধ্যে গুরুবর, দেবেন বাড়ৈ, ব্রজেন মন্ডল, আখের, আকরাম, লোকমান শেখসহ নাম না জানা অনেকে শহীদ হোন। হানাদার বাহিনী আক্রোশ মেটাতে গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা লোকমান পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লে তাকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়।

২৩ আষাঢ় পাটগাতী ইউনিয়নে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান নুরুল হকের বাড়িতে হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েতের নেতৃত্বে ৭ জন কমান্ডার ও একশত জন মুক্তিযোদ্ধা আক্রমন চালায়। এ সময় ই পি আরের আব্দুস সালাম শহীদ হোন। আহত হন লেয়াকত শাহ, আব্দুস সাত্তার শাহ, আবুল মকিত ও কমান্ডার আলম।

রফিকুল ইসলাম মিন্টু ভারতে প্রশিক্ষন নিয়ে ৮ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। যশোরের বয়রা নামক স্থানে সম্মুখ যুদ্ধ করেন। যশোর সেনানিবাস আক্রমনে তিনি অংশ নেন।

ফজলুল হক মনি মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিব বাহিনী গঠন করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠকও ছিলেন। মুজিব বাহিনীতে টুংগীপাড়ার ছিলেন শেখ শহিদুল ইসলাম, শেখ শাহান প্রমুখ। খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন। তিনি এ এলাকার যুবকদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেন।

১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর সাবেক টুংগীপাড়া উপজেলা কমান্ডার শেখ শহিদুল ইসলাম ১৩০ জন যোদ্ধা নিয়ে টুংগীপাড়ায় প্রবেশ করেন।

এভাবে টুংগীপাড়ার বীর যোদ্ধারা দীর্ঘ নয় মাস সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করতে অবদান রাখেন। এ সময়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরবাড়ী লুটপাট ও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তাদের পিতামাতাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। টুংগীপাড়ার জনগন তাদের ঋন চিরদিন মনে রাখবে।

তথ্য সংগ্রহেঃ শওকত ইসমাইল বালাকী (সহকারী অধ্যাপক, সরকারি শেখ মুজিবর রহমান কলেজ)